মাওলানা মো: সিরাজুল ইসলাম
সামর্থবানদের জন্য শুধু কোরবানি দেওয়াই যথেষ্ট নয়৷ কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য কিছু করণীয়, বর্জনীয় ও সতর্কতার ব্যাপারে আমাদের মনোযোগী হতে হবে৷ কোরবানি হতে হবে মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে শুধু আল্লাহর আদেশ পালন ও সন্তুষ্টির জন্য এবং ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী৷ এ দুটোর অনুপস্থিতিতে বা যে কোনো একটির অনুপস্থিতিতে কোরবানি বা যে কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না৷ এ ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য দয়াময় আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আমাদের জানিয়েছেন, “এবং তাদের যথাযথভাবে শোনাও আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) কাহিনী৷ যখন তারা কোরবানি করল তখন তাদের একজনের কোরবানি কবুল করা হয়েছিল এবং অপর জনের কবুল করা হয়নি”্ (সুরা আল মায়িদা-২৭ আয়াত)৷ আমরা এ প্রবন্ধে ৫টি সতর্কতামূলক বিষয়ে নজর দেব৷
১. শরিক নির্বাচনে সতর্কতা : সামথর্্যবানদের জন্য একাকি কোরবানি দেওয়াই নিয়ম৷ প্রয়োজনে ছোট গরু বা ছাগল কোরবানি দেওয়া যেতে পারে৷ এতে ইখলাসের সঙ্গে এবং শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী কোরবানি করা আলস্নাহর রহমতে সম্ভব ও সহজ হয়৷ শরিকে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্র যাচাই-বাছাই করে শরিক নির্বাচন করতে হবে৷
শরিকদের কেউ যদি আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে অন্য উদ্দেশ্যে কোরবানি করে যেমন কোরবানি না দিলে সমাজের মানুষ বা আত্মীয়স্বজন কি ভাববে মনে করে কোরবানির নিয়ত করে, এরকম লোককে শরিক বানালে কারও কোরবানি হবে না৷ একইভাবে শরিকদের কারও পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারও কোরবানি সহীহ হবে না৷
২. নিজের নামে না দিয়ে মা-বাবার নামে কোরবানি : উপার্জনকারী ছেলে সামর্থ্যের অধিকারী হলে নিজের নামে কোরবানি দিতে হবে৷ পিতা-মাতা
সামর্থবান হলে তাদের নামেও কোরবানি দিতে হবে৷ ছেলে সামর্থবান কিন্তু পিতা-মাতা সামথর্্যবান নয়, এ ক্ষেত্রে, ছেলে নিজের নামে কোরবানি অবশ্যই করতে হবে এবং সুযোগ থাকলে পিতা-মাতার নামে বা যে কোনো একজনের নামে ও করবে৷ নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করে মা বাবার নামে কোরবানি করলে অথবা মা-বাবা মনে কষ্ট নেবেন ভেবে মা-বাবার নামে কোরবানি করা ভুল৷ সামথর্্য না থাকলে নিজের ওয়াজিব কোরবানি আদায়ের ক্ষেত্রে মা-বাবাকে ছওয়াব পেঁৗছানোর নিয়ত করা যাবে ৷
৩. শুধু পরিবার প্রধানের নামে কোরবানি : যৌথ পরিবারে বা একই পরিবারে একাধিক উপার্জনকারী ব্যক্তি থাকলে এবং প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে কোরবানির সামর্থ্যের অধিকারী হলে প্রত্যেকের নামে আলাদা কোরবানি করতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে শুধু পরিবারের কর্তার নামে কোরবানি দেওয়া ভুল৷ শুধু পুরুষ নয় নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে নারীদের নামেও কোরবানি দিতে হবে৷
৪. কোরবানি নয় আকিকা : কিছু কিছু অমূলক এবং ধর্ম বিবর্জিত ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে৷ কোরবানির সময়ের এরকম একটি অমূলক ধারণা হচ্ছে আকিকা না দিয়ে থাকলে কোরবানি দেওয়া যায় না ৷ অথচ ধর্মের নিয়ম হচ্ছে আকিকা দেওয়া না হলেও কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকলে কোরবানি অবশ্যই দিতে হবে৷
৫. কোরবানির গোসত ওজন নয় বন্টন : প্রকৃত ঈমানদার মুসলামানের জন্য ধর্মের কোনো হুকুমকে সংকীর্ণতা ভাবার কোনো সুযোগ নেই৷ মুসলমানের পছন্দ অপছন্দের মাপকাঠি হতে হবে ধর্ম এবং ধর্মীয় রীতিনীতি৷ শরিক কোরবানির ক্ষেত্রে কোরবানির গোশত বন্টন করার পর তা ওজন করতে হবে৷
কোরবানির কিছু সতর্কতা
