দেশী ফলের যতগুন
উম্মে নুসাইবা
দেশি গাব
পুষ্টিগুণ: এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে।
ঔষধিগুণ: দেশী গাবের ফলের খোসার গুঁড়া আমাশয় নিরাময় এবং একজিমা ও চর্মপীড়ার মলম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। খোসা গরম পানিতে সেদ্ধ করে পান করে পান করলে পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া নিরাময় হয়। পাতা ও বাকল গরম পানিতে সেদ্ধ করে পান করলে কৃমি, পাতলা পায়খানা, আমাশয় ও মূত্র সংক্রান্ত রোগ উপশম হয়। বিলাতি গাবের ফল রক্ত-আমাশয় ও উদারাময় রোগে ব্যবহৃত হয়। ফল মুখের ও গলার ঘা ধৌতকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার: পাকা গাব খাওয়া হয়। গাবের কষ (ষধঃবী) দিয়ে মাছ ধরার জাল ও নৌকায় প্রলেপ দেওয়া হয়।
বাতাবি লেবুর পুষ্টি
এই মৌসুমের ফল বাতাবি লেবু। ভিটামিন ‘সি’, বিটা ক্যারোটিন আর ভিটামিন ‘বি’তে ভরপুর বাতাবি লেবু। গর্ভস্থ মহিলা, স্তন্যদানকারী মা ও সন্তান নিতে ইচ্ছুক নারীদের জন্য বাতাবি লেবু যথেষ্ট উপকারী। এই ফলে লিমোনোয়েড নামে এক ধরনের উপকরণ রয়েছে যা ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে। বাতাবি লেবুর রস শরীরের বাড়তি আমিষ ও চর্বিকে ভেঙে আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমতে বাধা দেয়। বার্ধক্য দূরে ঠেলতে ও ইনফেকজনিক সমস্যা (প্রধানত ত্বক, মুখ, জিহ্বা) দূর করতে এই ফল রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। খাবার হজমের জন্য হজমকারী এনজাইম হিসেবে কাজ করে এই লেবুর রস। অতিরিক্ত গরমে আমাদের শরীরে ফোড়া হয়।
যেকোনো চর্মরোগ, ফোড়া, ঘায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই ফল। অপারেশন বা অস্ত্রোপচারের পরে বাতাবি লেবুর রস অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির বাতাবি লেবু রয়েছে। বেশি পাওয়া যায় লালচে ও সাদা রঙের লেবু। দুটোই ভীষণ উপকারী। গরম, ঠান্ডাজনিত কারণ বা ঘাম জমে যে জ্বর হয়, বাতাবি লেবু তাদের জন্য দরকারি পথ্য। এই লেবু গাছের পাতাও পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে কচিপাতা খাওয়া যায়। যাঁরা নিয়মিত এই ফল খান তাঁদের ছোঁয়াচে রোগগুলো সহজে হবে না। তাই সুস্থ থাকতে বাতাবি লেবু খান।
আমড়ার মৌসুম
প্রকৃতিতে এসেছে আমড়ার মৌসুম। আমাদের দেশে দুই ধরনের আমড়া পাওয়া যায়। দুই রকমের আমড়াতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। আমড়ার ভিটামিন সি বর্ষার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কিছু রোগজীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়, নোংরা পানিতে বাসা বাঁধে এমন জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। দাঁতের মাড়ি শক্ত করে, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত, পুঁজ, রক্তরস বের হওয়া প্রতিরোধ করে আমড়া। এর ভেতরের অংশের চেয়ে বাইরের খোসাতে রয়েছে বেশি ভিটামিন সি আর ফাইবার বা আঁশ, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। আর আঁশ-জাতীয় খাবার পাকস্থলী (স্টমাক), ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদন্ত্রর (পেটের ভেতরের অংশবিশেষ) জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তাই খোসাসহ আমড়া খাওয়াটাই উত্তম। তবে খোসা অতিরিক্ত টক আর সবাই হজম করতে পারে না, তাই দুর্বল হজমশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের আমড়ার খোসা পরিহার করাই শ্রেয়। কারণ, আমড়ার খোসা অতিরিক্ত টক। বাঁকা দাঁত রয়েছে, এমন ব্যক্তি খোসাসহ আমড়া কামড়ের পরিবর্তে চাকু দিয়ে কেটে খান। কারণ, খোসার শক্ত আবরণ বাঁকা দাঁতের ব্যক্তিদের মাড়িতে আঘাত করবে বেশি, যা উপকারের পরিবর্তে বয়ে আনবে অপকার।
চর্বি বা কোলেস্টেরল কমিয়ে, হূৎপিণ্ডে সঠিকভাবে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে আমড়া। ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সালাদের বাটিতে অনায়াসে স্থান পাবে আমড়া। এতে চিনির পরিমাণ খুব কম। তাই উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার), ডায়াবেটিসের রোগীরা খেতে পারেন নিন্ডিন্তে। তবে পাকা আমড়া ডায়াবেটিসের রোগীরা পরিহার করুন। কারণ, পাকা আমড়ায় সুগারের পরিমাণ কাঁচার তুলনায় বেশি থাকে।
—-০—-