ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
পিঁয়াজ বাংলাদেশের একটি মসলা ফসল। ঔষধ হিসাবে পিঁয়াজের ব্যবহার সুপ্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ন। পিঁয়াজ আদিকালে কলেরা ও প্লেগ রোগের প্রতিশেধক হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এটি বর্ষজীবি কন্দ জাতীয় ফসল। পিঁয়াজে এক প্রকার উদ্বায়ী তেল এবং বিভিন্ন প্রকার সালফার যৌগ যেমন-মনো, ডাই, ট্রাই এবং টেট্রাসালফাইড থায়োল এবং থায়োফেন ডেরিভেটিভস পাওয়া যায়। পিঁয়াজে বিদ্যমান অ্যালাইল প্রোপাইল ডাইসালফাইড ঝাঁঝ তৈরী করে। পিঁয়াজে থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, অ্যামাইনো এসিড, পলিফেনল, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি, স্যাপোনিন, বিটা-অ্যামিন, স্টেরল, ফেনলিক এসিডস, ক্যাটেচল, ফলিক এসিড, প্রোটোক্যাটেচুয়িক এসিড, হজম যোগ্য আঁশ ইত্যাদি। একটি বড় পিঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। পিঁয়াজ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (খউখ)-এর পরিমাণ কমায়। তাই অনেক কার্ডিওলজিস্টই রোগীদের নিয়মিত পিঁয়াজ খেতে পরামর্শ দেন । বিশেষ করে হার্টের ডাক্তার ভিক্টর ও গুডউইচ তাঁর রোগীদের প্রতিদিন অন্তত একটি করে পিঁয়াজ খাওয়ার উপদেশ দেন। পিঁয়াজের রস বিষাক্ত নয় এবং এর কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নাই। তাই যত খুশি খেলেও কোন সমস্যা নাই। গবেষকদের মতে দিনে ২-৩ টি কাঁচা পিঁয়াজ ভক্ষণ করলে নিন্মলিখিত উপকার পাওয়া যায়ঃ
১. পিয়াজে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের ডিএনএ-কে তির হাত থেকে বাঁচিয়ে ব্রেষ্ট, প্লোষ্টেট (মলদ্বার), জরায়ু এবং লান্স টিউমার/ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
২. কাঁশি, ঠান্ডা লাগা, এজমা ও ব্রঙ্কাইটিস সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে।
৩. পিঁয়াজে এলাইল প্রোপাইল ডাই সালফাইড আছে, যাহা ইনসুলিনের মত কাজ করে। যাহা রক্তের চিনির সাম্যতা বজায় রাখে।
৪. ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৫. ইনসুলিন ব্যবহারকারী ডায়াবেটিস রোগী প্রতিদিন ৫০ গ্রাম করে পিঁয়াজ খেলে ইনসুলিনের মাত্রা ৪০ থেকে কমিয়ে ২০ ইউনিটে আনা যায়।
৬. পিঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতুর হাত থেকে মুক্তি দেয়। এমনকি এগুলো শরীর থেকে সীসা, আর্সিনিক, ক্যাডমিয়াম বের করে দেয়।
৭. নাক দিয়ে রক্ত পড়লে ৩-৪ ফোঁটা পিঁয়াজের রস নাকে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
৮. বিষফোঁড়ায় পিঁয়াজের রস লাগালে টাটানি ও ব্যথা সেরে যায়।
৯. বাত-ব্যথা কমায়।
১০. সালফার জাতীয় পদার্থ থাকায় রক্ত পাতলা রাখতে সহযোগিতা করে ও রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে।
১১. পিয়াজ ধমনীতে ময়লা (চষধয়ঁব) জমতে দেয়া না।
১২. ব্লাড প্রেসার কমায়।
১৩. রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। তাই হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৪. সুস্থ্য হার্ট নিশ্চিন্ত করে ও হার্ট এটাকের ঝুকি কমায়।
১৫. মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৬. শরীরের এলার্জি ও চুলকানী নিয়ন্ত্রণ করে।
১৭. হজম শাক্ত বৃদ্ধি করে।
১৮. আমাশয় ও ডায়রিয়া কমায়।
১৯. গ্যাষ্ট্রিক ও আলসারের ঝুঁকি কমায়।
২০. ইহা মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।
২১. যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
————————————–
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
মোবাইলঃ ০১৯১১-৭৬২৯৭৮