১। রোগের নাম: পাউডারি মিলডিও (Powdery Mildew) রোগ
রোগের কারণ: এরাইসিপি স্পেসিস (Erysiphe polygoni) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: শীতের সময় হঠাৎ মেঘ করে ঠান্ডা কমে গেলে এবং শুস্ক আবহাওয়া বা ৫০-৬০% বাতাসের আর্দ্রতায় এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গাছ বেশী ঘন হলে এবং খরা অবস্থায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী হয়।
রোগের লক্ষণ
- পাউডারি মিলডিও পুদিনার একটি মারাত্মক রোগ।
- পাতার উপর ধূসর বা সাদা পাউডারের মত দাগ পড়ে।
- আক্রান্ত পাতার সবুজ রং নষ্ট হয়ে যায় এবং পাতা শুকিয়ে যায়।
- পাতার উপর পাউডার দ্বারা আবৃত থাকায় সালোক সংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হয়, ফলে গাছ ছোট আকারের হয়।
- রোগ মারাত্মক আকারে হলে পাতা ঝরে পড়ে।
- রোগের প্রকোপ বেশী হলে সমস্ত গাছ (শাখা ও কান্ড) আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।
রোগের প্রতিকার
- ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ এবং আর্বজনা পুড়ে ফেলতে হবে।
- রোগাক্রান্ত গাছ সমূহ তুলে ধ¦ংস করতে হবে।
- দ্রুত বেগে পানি স্প্রে করলে রোগের প্রাদূর্ভাব কমে যায়।
- রোগ দেখা মাত্রই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি বা কুমুলাস ডিএফ) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা ট্রাই ব্যাসিক কপার সালফেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কুপ্রোক্স্যাট ৩৪৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২। রোগের নাম: পাতা পোড়া/ঝলসানো (Leaf Blight) রোগ
রোগের কারণ: সেফালোস্পোরিয়াম স্পেসিস (Cephalosporium spp) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: জীবাণু গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে।
রোগের লক্ষণ
- বছরের যে কোন সময় এ রোগ দেখা দিতে পারে।
- রোগ দেখা দিলে সমস্ত পাতা গাঢ় খয়েরী বা কালো হয়ে ঝরে পড়ে।
রোগের প্রতিকার
- রোগাক্রান্ত পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।
- পাতা পোড়া/ঝলসানো রোগ দেখা দিলে ডাইফেনোকোনাজল + এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে অথবা মেটিরাম ৫৫% + পাইরাক্লস্ট্রবিন ৫% গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-ক্যাবরিওটপ ৬০ ডব্লিউপি) ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৪ বার গাছে ¯েপ্র করতে হবে।
৩। রোগের নাম: মরিচা রোগ (Rust) রোগ
রোগের কারণ: পাকসিনিয়া মেনথি (Puccinia menthae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার: ফসলের পরিত্যক্ত অংশে ছত্রাক বেচে থাকতে পারে। বিকল্প পোষক হতে বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায় এবং আর্দ্র্র্র আবহাওয়ায় বিস্তার লাভ করে। বয়স্ক গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
রোগের লক্ষণ
- পাতার নীচে ছোট, ময়লাযুক্ত, উজ্জ¦ল কমলা বা হলুদ বা বাদামী ফোস্কার মত দাগ দেখা যায়।
- নতুন ডগা ও কান্ডেও দাগ পড়ে এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।
- পাতার অনেক বড় অংশের টিস্যু মরে যায়
- পাতা ঝরে পরতে পারে।
রোগের প্রতিকার
- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
- জমিতে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
- জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে তাতে পুদিনা গাছের কাটিং শোধন করে জমিতে লাগাতে হবে।
- হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-কনটাফ ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে ¯েপ্র করতে হবে।
————————————–
লেখক:
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।