সোনালি আঁশ খ্যাত পাট বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। বিশ্বের মধ্যে পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং রপ্তানিতে প্রথম স্থান অর্জনকারী দেশ। পাটখাত এখনও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। শ্রমঘন পাটখাত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে পাটের স্বর্ণযুগ থাকলেও পরবর্তীতে কৃত্রিম আঁশের ব্যাপক প্রচলন ও প্রসার ঘটলে পাটের দুর্দিন শুরু হয়। একের পর এক পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে পাট, পাটপণ্য উৎপাদন, রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। পাট শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাট নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। যার কারণে পাট গবেষণায় একে একে সফলতা আসতে শুরু করে। বেশ কয়েকটি বন্ধ পাটকল পূনরায় চালু করা হয়। পাটের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এবং পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩ কার্যকর করা হয়। একটি সময়োপযোগী পাট আইন অনুমোদন হতে যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ২০১৩ সালে তরুণ একদল বিজ্ঞানীকে নিয়ে তোষা পাটের জিন নকশা উন্মোচন করেন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাকসুদুলের নেতৃত্বে পরে ম্যাক্রোফমিনা ফাসিওলিনা নামের এক ছত্রাকের জিন-নকশা উন্মোচন করেন, যা পাটসহ প্রায় ৫০০ উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পাটের জিন-নকশা উন্মোচনের ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রয়োজন অনুযায়ী পাটের নতুন জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি পাটের গুণগত মান ও উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বাড়ানো সম্ভব হবে। আর নতুন জাত উদ্ভাবন করা হলে পাট পঁচাতে কম সময় লাগবে, আঁশ দিয়ে জৈব জ্বালানি ও ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হবে। এরপর আমেরিকায় অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন কর্তৃক তিনটি জিনোমের কোড নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশ।
পাট পণ্য জনগণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ৬ মার্চ ২০১৭ তারিখ দেশব্যাপী প্রথম বারের মত জাতীয় পাট দিবস-২০১৭ উদযাপন করা হয়। এবারের পাট দিবসের শ্লোগান ছিল ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’। দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সঙ্গে মানানসই বাংলাদেশের গর্ব সোনালি আঁশ বা পাটের বহুবিধ পণ্য বাজারে বিদ্যমান। ফলে এই পাটশিল্প বিকাশের স্বার্থে যথাসম্ভব দেশীয় সংস্কৃতি ধারণ করে এরূপ পরিবেশবান্ধব পাটজাত সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এতে পাট চাষিগণ পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন। পাটখাতের উন্নয়ন ঘটবে এর সাথে সাথে সোনালি আঁশের ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে বাংলায়। পাট পরিবেশবান্ধব, তাই নির্মল ও দূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পাট ও পাটজাত বহুমুখী পণ্যের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি পাট নিয়ে জাতীয় দিবস পালন সহ সরকারের নানা পদক্ষেপ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সোনালি আঁশ অন্যতম ভূমিকা রাখবে।
২. মার্চ মাস আমাদের মহান স্বাধীনতার মাস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। হানাদারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। যাঁদের রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে আমরা এ দেশ পেয়েছি তাদের জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।