কৃষিবিদ ড. এম. এ. মান্নান
প্রশ্ন ঃ আমি সরিষার চাষ করেছিলাম। এক ধরণের ছোট ছোট পোকার আক্রমণ হয়েছিল। পাশের এক কৃষক ভাই বলল এটা নাকি জাব পোকা। আপনাদের পত্রিকাটি পড়ে মনে হল আপনাদেরকে প্রশ্ন করে বিষয়টি জেনে নিই। তাই প্রশ্ন করলাম। জাব পোকার আক্রমণ হলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জানালে খুশি হব।
মোঃ সাবের আহমেদ
গ্রামঃ চরকাওনা, পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ
উত্তর ঃ ভাই সাবের আপনার আগ্রহ এবং প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ। জাব পোকা সরিষার প্রধান ক্ষতিকারক পোকা।
- পূর্ণ বয়স্ক পোকা ও বাচ্চা উভয়ই সরিষার পাতা, কান্ড, ফুল ও ফল হতে রস শোষণ করে।
- আক্রমণ বেশী হলে ফুল ও ফলের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়।
- জাবপোকা এক ধরণের রস নিঃসরণ করে ফলে গাছটি সুটি মোল্ড রোগে আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত অংশ কালো দেখায়, ফলে ঠিকমত বাড়ে না, বীজ আকারে ছোট হয়।
এবার প্রতিরোধ এবং প্রতিকার সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হলো ঃ
- আগাম সরিষা চাষ করলে জাব পোকার আক্রমণের আশংকা কম থাকে।
- প্রতি গাছে ৫০টির বেশী পোকা থাকলে প্রতি লিটার পানিতে পিরিমর ১-২ গ্রাম বা ২ মিলি ম্যালয়িন বা সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন মিশিয়ে বিকালে ¯েপ্র করতে হবে।
- আক্রামণ বেশী হলে প্রতি লিটার পানিতে এসাটাফ ০.৫-১ গ্রাম ও এমিটাফ, টিডো, এডমায়ার যে কোনটি ০.৫ গ্রাম মিশিয়ে ¯েপ্র করা।
সাবের ভাই, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি জাব পোকামুক্ত সরিষা পাবেন আশা করছি, ধন্যবাদ।
প্রশ্নঃ আমি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট ভালই হবে আশা করেছি। সমস্যা হবে পাট পঁচানো নিয়ে। পাট জাগ দেওয়ার পানি নাই। রিবন পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর কথা শুনেছি। পদ্ধতিটি একটু বিস্তারিত জানতে চাই।
মোঃ শাহাব উদ্দিন
গ্রাম ঃ পিড়াপাট, উপজেলা ঃ ধনুট
জেলা ঃ বগুড়া।
উত্তর ঃ শাহাবউদ্দিন ভাই আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। পানি স্বল্পতা হেতু রিবন পদ্ধতিতে পাট পঁচানো হয়।
এই পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্যঃ
- ১০০ থেকে ১২০ দিন বয়সের পাট কেটে পাতা ঝরিয়ে নিয়ে গাছের গোড়া থেতলে নিতে হবে।
- তারপর ৪ থেকে ৫টি গাছের ছাল এক সাথে ডাবল রোলার রিবনারের সাহায্যে ছাড়িয়ে নিতে হবে।
- ছালগুলোকে গোলাকার মোড়া বাঁধতে হবে।
- তারপর গোলাকার মোড়াগুলো গর্তের মধ্যে ডুবিয়ে দিতে হবে।
- এজন্য আগেই গর্ত করতে হবে। আর সে গর্তের পরিমাপ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা, চওড়া ৬ থেকে ৮ ফুট এবং ২ ফুট গভীর হতে হবে।
- পলিথিন দিয়ে গর্তের তলা ও কিনারা আবৃত্ত করতে হবে।
- মোড়াগুলো কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- পচন ক্রিয়া তাড়াতাড়ি করার জন্য ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ১০০০ কেজি কাঁচা ছালের জন্য ১কেজি ইউরিয়া মিশাতে হবে।
ক্স তারপর ৭ থেকে ৮দিন পর ছালগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে আঁশ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হবে।
রিবন পদ্ধতিতে পাট পঁচানোই বেশি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। তাই আশা করছি আপনি নিজে পাট পঁচানোর জন্য রিবন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন এবং অন্যদেরকেও রিবন পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর জন্য উৎসাহিত করবেন।
প্রশ্ন ঃ আমি আমার নিজের জমি থেকে আমন ধানের বীজ রাখব। আমাকে কি কি বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। জানালে খুশী হব।
মোঃ হাবিবুর রহমান
গ্রামঃ ইছাপুরা, উপজেলা ঃ হাজিগঞ্জ
জেরা ঃ চাঁদপুর।
উত্তর ঃ হাবিব ভাই, আপনার পত্রের জন্য ধন্যবাদ। নিজের বীজ নিজে রাখতে পারলে ভাল। তার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়।
- প্রথমতঃ ভাল জাতের বীজ আবাদ করা দরকার।
- যে জমি থেকে বীজ রাখতে চাচ্ছেন সে জমি টা একটু বড় হলে ভাল হয়।
- জমিতে যেন কোন প্রকার রোগ বা পোকার আক্রমণ না হয় সে জন্য প্রতিনিয়ত জমি তদারকি করা দরকার।
- কোন প্রকার রোগ বা পোকার আক্রমণ হয়ে গেলে সাথে সাথে তা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
- জমিতে ছড়া এলে প্রতিনিয়ত তদারকি করে ভিন্ন জাতের ছড়া গুলো উপড়ে ফেলতে হবে অর্থাৎ রগিং করতে হবে।
- মেঘলা দিন বাদ দিয়ে ধান কাটতে হবে। এবং পরিষ্কার স্থানে মাড়াই ও ঝাড়াই করে এমন ভাবে শুকাতে হবে যেন ১২% এর বেশী আর্দ্রতা না থাকে।
- শুকানো ধান ছায়ায় ঠান্ডা করে বিষকাটালীর বা নিম পাতা সহ পলিথিনের কাল বস্তায় রাখতে হবে।
- ১ মাস পর পর তথা মাঝে মাঝে নামায়ে হালকা করে শুকাতে হবে।
এ ভাবে ব্যবস্থা নিলে আপনি নিজের জমি থেকেই ভাল বীজ রাখতে বা সংরক্ষণ করতে পারবেন। নিজের জমি থেকে-ই ভাল বীজ রেখে ভাল ফলন ঘরে তুলবেন এই প্রত্যাশায় আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।