গম বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দানাদার ফসল। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য যোগাতে ধানের পরেই গমের স্থান। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট প্রায় ৪.৩৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৩.৪৭ লক্ষ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। গমের মারাত্মক একটি রোগের নাম ব্লাস্ট রোগ। এ রোগটি বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০১৬ সালে। বাংলাদেশ এশিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীতে ফসলের ভয়াবহ রোগগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট রোগ অন্যতম। অনুকুল আবহাওয়ায় যা মহামারি আকারে দেখা দেয়। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম এ রোগটি ব্রাজিলে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ পাইরিকুলেরিয়া অরাইজি ট্রিটিকাম নামক এক ধরণের ছত্রাকের সংক্রমণে এ রোগ হয়। বাংলাদেশে গত শীত মৌসুমে গমের ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় গম উৎপাদনে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আটটি জেলার প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমির গম ক্ষেত পুড়ে বিনাশ করা হয়। আক্রান্ত জমিতে ৪০-৫০ ভাগ, ক্ষেত্র বিশেষে শতভাগ ফসল নষ্ট হয়। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের মাঝে এ নিয়ে আশংকা ও উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যায়।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে একদল গবেষক গত বছর এ রোগের জীবাণুর জীবন রহস্য উম্মোচন করেছেন। তাদের বর্তমান গবেষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত তৈরি করা। এতে পরিবেশে জীবাণু থাকলেও তা গমে আক্রমণ করতে পারবেনা। গবেষক দলের মতে, নতুন রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন ছাড়া এ রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আক্রান্ত গম ক্ষেত পুড়িয়ে বা কেটে গবাদীপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এ রোগের সংক্রমণ রোধ করা যাবেনা। এছাড়াও সাময়িকভাবে গম চাষ বন্ধ করাও কোন কার্যকরী সমাধান নয়। তাই বিদেশী কারিগরি সহায়তায় ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে। উৎকন্ঠার ভেতরেও এটা একটা আশাব্যঞ্জক খবর।
গবেষকরা ধারণা করছেন ইতোমধ্যে এ রোগটি নতুন কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। অতিসত্তর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আক্রান্ত এলাকাসমূহ থেকে গম বীজ, শষ্য, গাছ, চারা বা অন্যান্য অংশ দেশের অন্যত্র পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য সরকারিভাবে ইলেক্টনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন। কোন এলাকায় এ জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোসহ সারাবিশ্ব আজ উৎকন্ঠিত। পরিশেষে, গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি জাতীয় কারীগরি কমিটি গঠন করার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ সমস্যাটি উত্তরণে সবাইকে কাজ করতে হবে।
২. ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। কৃষিবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল মাতৃভাষা দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।