কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান খান
ড্রোন দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কিছুই করা হচ্ছে। এবার বাংলাদেশে কৃষি গবেষণায় ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন। কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পটুয়াখালীতে কৃষি গবেষণায় ব্যবহার হচ্ছে এই ড্রোন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রমেই বাড়ছে ড্রোনের ব্যবহার। আর বিশ্বের অন্যান্য প্রযুক্তির সঙ্গে এ বার বাংলাদেশে ও ড্রোনসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিক এমন এক সময় কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পটুয়াখালীতে কৃষি গবেষণায় ব্যবহার হচ্ছে ড্রোন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যে ড্রোন ব্যবহার করে কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা কাজ চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত প্রায় এক মাস ধরে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার জৈনকাঠি, কলাপাড়ার পূর্ব আমীরাবাদ সহ বেশ কিছু এলাকায় ড্রোন দিয়ে কৃষি কাজে গবেষণার কাজ চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বরিশাল সদরের উলান বাদনা গ্রামে ড্রোন দিয়ে গবেষণার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডের টুয়েন্ট বিশ্ব বিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথ ভাবে এই ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি মানুষ বিহীন যান (ড্রোন) ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষক জমিতে পরিমিত সার প্রয়োগ ও রোগ-পোকামাকড়ের আক্রমণ দমন করার বার্তা অথবা তথ্য সং গ্রহের জন্য এই যানটি ব্যবহার করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে কৃষি গবেষণায় সফলভাবে ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক ভুট্টাও গম গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, শুধু কৃষি গবেষণায় ব্যবহৃত যানটি (ড্রোন) রিমোর্ট কন্ট্রোল প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রিত ভাবে ফসলের ক্ষেতের ৬০ মিটার ওপর দিয়ে উড়ে যাবে এবং একই সঙ্গে ধান, গম, ভুট্টা ও মুগ ডালসহ বিভিন্ন ফসলের স্থির ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করবে। সংগ্রহীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফসলের পানি ও সারের ঘাটতি নিরিক্ষণ করা খুব সহজ হবে এবং সেই মোতাবেক কৃষকরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট কোনো রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে তাও জানা যায়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী প্রয়োজনীয় রোগবালাই দমন ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে। এই পদ্ধতিতে সঠিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা কম সময়ে এবং কম শ্রমে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। ফলে কৃষকের সার এবং সেচের পানির অপচয় এবং কীটনাশকের অপ ব্যবহার রোধ করা সম্ভবপর হয়। এই গবেষণার পর কৃষকদের একটি নির্দেশিকা প্রদান করা হবে। যার মাধ্যমে কৃষকরা কখনও কী পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পেতে থাকবে।
উল্লেখ্য, ড্রোন পরিচালনার জন্য জার্মান হতে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন গবেষক ড. জিয়া উদ্দিন আহমদ। এর পর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কাছে ড্রোনের মাধ্যমে কৃষি গবেষণার সামগ্রিক বিষয় অবহিতও করা হয়। শর্ত সাপেক্ষে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ডিজি এফ আইয়ের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধায়নে ড্রোন দিয়ে কৃষি গবেষণার কাজ শুরু করা হয়।
————————————–
লেখকঃ
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বারি, গাজীপুর